898 898 8787

প্রোস্টেট ক্যান্সার ও তার চিকিৎসা - MyHealth

Bengali

প্রোস্টেট ক্যান্সার ও তার চিকিৎসা

author

Medically Reviewed By
Dr. Ragiinii Sharma

Written By Srujana Mohanty
on Sep 24, 2022

Last Edit Made By Srujana Mohanty
on Mar 17, 2024

share
Prostate cancer and its treatment in Bengali
share

ক্যান্সার শব্দটি শুনলে আমাদের সবার মনেই তৈরি হয় ভীতি। ক্যান্সার একক কোন রোগ নয়। অনেক গুলো রোগের সমাহার। আমাদের মানব দেহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা গঠিত। এসব কোষ একটি সুনির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পূরণ করে থাকে। 

কিন্তু দেখা যায় কখনো কখনো কোন অজ্ঞাত কারণে একটা নির্দিষ্ট কোষ বা সেল হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়, যার গতি বিরামহীন। ফলত সেখানে একটি পিণ্ড বা টিউমারের সৃষ্টি হয়। এই টিউমার স্থানীয়ভাবে আশপাশের কোষে প্রবেশ করে এবং লসিকা বা রক্তের মাধ্যমে শরীরের দূরবর্তী স্থানে গিয়ে নতুন বসতি স্থাপন করে, যাকে বলা হয় মেটাস্টেসিস। এভাবে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরে।

ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকাটা সকলের জন্য আবশ্যক। ক্যান্সার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে তার মধ্যে এক প্রকার হলো প্রোস্টেট ক্যান্সার। আসুন, আমরা প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই! 

প্রোস্টেট ক্যান্সার আসলে কী?

পুরুষদের শরীরে ক্ষুদ্র প্রোস্টেট গ্রন্থি থাকে মুত্রনালীর পাশে কিছুটা আখরোট আকৃতির ন্যায়। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছুটা তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয় সেটি আসলে শুক্রাণু এবং এই তরল পদার্থের মিশ্রণ। এই প্রোস্টেট গ্রন্থিকে কেন্দ্র করে দানা বাঁধে প্রোস্টেট ক্যান্সার। ৫০ বছর বয়সের পর পুরুষদের শরীরে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের কোন লক্ষণ ধরা পড়ে না। শরীরের অন্য অংশে ছড়ানোর পর এর লক্ষণ প্রকাশ্যে আসে। এই কারণে কিছু নির্দিষ্ট সমস্যার প্রতি পুরুষদের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। 

প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষ একটি প্রোস্টেট টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তনালী বা লিম্ফ নোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের অন্যান্য অংশে। ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য টিস্যুর সাথে সংযুক্ত হয়ে নতুন টিউমার তৈরি করতে সক্ষম হয়। ফলে সারা শরীরে ক্যান্সারের সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রোস্টেট ক্যান্সার শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লেও, তার নামের কোন পরিবর্তন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, যদি প্রোস্টেট ক্যান্সার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে তবে হাড়ের ক্যান্সার কোষগুলি আসলে প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষ। এক্ষেত্রে রোগটি মেটাস্ট্যাটিক প্রোস্টেট ক্যান্সার, হাড়ের ক্যান্সার নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হলে রোগ-মুক্তির সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

প্রোস্টেট ক্যান্সার বা মূত্র থলির ক্যান্সারের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব সঠিক ডায়েট চার্টের অনুসরণে। একটি পরিকল্পিত জীবন যাপন এবং সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে আমরা দূরারোগ্য ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে পারি।

প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো কি কি?

অন্যান্য ক্যান্সারের মতো প্রোস্টেট ক্যান্সারের উপসর্গও প্রথম দিকে বোঝা যায় না। কিন্তু প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ সম্বন্ধে প্রত্যেকের কিছু সাধারণ জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক। নিম্নে কিছু সাধারণ লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হল। 

  • প্রস্রাব নিষ্কাশনের সমস্যা :- ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায় এবং প্রস্রাব নিষ্কাশনের সময় ব্যথা বা জ্বালাবোধ প্রোস্টেট ক্যান্সারের অন্যতম বিশেষ লক্ষণ। 
  • প্রস্রাব বা বীর্যে রক্তপাত :- অনেক সময় দেখা যায় পুরুষদের প্রস্রাব ও বীর্য দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। এটিও প্রোস্টেট ক্যান্সারের একটি বিশেষ লক্ষণ।
  • গাঢ় প্রস্রাব :- প্রোস্টেট ক্যান্সারের আরো একটি লক্ষণ দেখা যায় সেটি হল গাঢ় রং এর প্রস্রাব নিঃসরণ। যার ফলে মূত্রত্যাগের সময় তলপেটে ব্যথা হয়।
  • হাড়ে ব্যথা :- মেরুদণ্ডে বা কোমরে ব্যথা দেখা দিলে সেটিও প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  • ওজন হ্ৰাস‌ :- প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে পুরুষদের অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কম হতে দেখা যায়।
  • ইরেক্টাইল ডিসফাংশন :- প্রোস্টেট ক্যান্সারের ফলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সূত্রপাত হয়।
  • অস্বস্তি বোধ :- বর্ধিত প্রোস্টেটের কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়, এমনকি বসে থাকাতেও অস্বস্তি প্রোস্টেট ক্যান্সার এর একটি বিশেষ লক্ষণ।

শরীরে এই সমস্ত বিশেষ লক্ষণগুলি দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাব্য কারণ

প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পেতে গবেষকরা অক্ষম। তবুও, কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, প্রোস্টেট গ্রন্থির কোষগুলির অনিয়ন্ত্রিত পরিবর্তনই প্রোস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সহায়ক। 

প্রোস্টেট ক্যান্সার জিনগত ভাবেও হতে পারে যা একটি অন্যতম উল্লেখ্য বিষয়। উত্তরাধিকার সূত্রেও এই ক্যান্সারের ব্যাপ্তি ঘটতে পারে যার কারণগুলি প্রায়শই আমাদের ডিএনএর জেনেটিক কোডের সাথে যুক্ত থাকে। অর্জিত কারণগুলি জেনেটিক মিউটেশনের ফলস্বরূপ, যেমন অনকোজেনগুলি সাধারণ প্রোস্টেট কোষকে একটি টিউমার কোষে রূপান্তরিত করে এবং টিউমার দমনকারী জিনগুলি কোষের প্রতিরূপ প্রক্রিয়া চলাকালীন বন্ধ হয়ে যায়। 

সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি থাকে। সেই তুলনায় ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রকোপ খুবই বিরল। কম বেশি পৃথিবীর সব জায়গাতেই প্রোস্টেট ক্যান্সারের হার প্রায় সমান। তবে উত্তর আমেরিকা ও উত্তর ইউরোপে মানুষের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি। জাতি গত ভাবে দেখলে কৃষ্ণাঙ্গ জাতিদের মধ্যে এই ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবন সঠিকভাবে চালনা না করা ও অসম খাদ্যাভাস যেমন অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত ও মশলাযুক্ত খাবার এই ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। সঠিকভাবে শরীরচর্চা না করা ও বিভিন্ন ফ্যাট যুক্ত খাবার খেয়ে ওজন বৃদ্ধিও প্রোস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত ধূমপান যারা করে থাকেন তাদের শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্বিগুণ হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। 

প্রোস্টেট ক্যান্সারের পরীক্ষা 

বর্তমান সময়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বারা এবং বিশিষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় এই রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক মানুষ বুঝতে পারেন না তারা কি করবেন বা কোথায় গেলে তারা সঠিক চিকিৎসা পাবেন। 

রেডক্লিফ ল্যাবের অধীনস্থ ডায়াগনোসিস সেন্টারগুলি প্রোস্টেট ক্যান্সারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং তার সঠিক চিকিৎসা দ্বারা বহু মানুষকে সুস্থ করে তুলেছে। যার কারণে মানুষের মধ্যে রেডক্লিফ ল্যাবের প্রতি জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে দিন দিন।

যদি আপনি পোস্টেড ক্যান্সারের কোন লক্ষণ উপলব্ধি করে থাকেন, তাহলে আপনার উচিত ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। 

ডাক্তার কোন পরামর্শ দেওয়ার আগে আপনার শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলি কি কি এবং সেগুলি কতদিন ধরে দেখা যাচ্ছে সেটি জানতে চাইবেন। এই প্রোস্টেট ক্যান্সারটি আপনার শরীরে বংশগতভাবে হয়েছে কিনা সেটি জানার জন্য আপনার বংশের ইতিহাসও জানতে চাইবেন। এইসব বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করেই তিনি নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেবেন।

রেডক্লিফ ল্যাবের অন্তর্ভুক্ত ডায়াগনোসিস সেন্টারগুলোতে প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলির ওপর ভিত্তি করে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

মূলত দুই রকমের পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়েছে কিনা সেটি দেখা হয়। যথা :-

  • প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (PSA) টেস্ট : 

এই পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের শরীরের রক্ত প্রবাহে কতটা পরিমাণ PSA আছে সেটি টেস্ট করা হয়। বীর্যের তরল প্রকৃতি বজায় রাখার জন্য PSA প্রাকৃতিকভাবে প্রোস্টেট দ্বারা উৎপাদিত হয়। প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোন পূর্ববর্তী লক্ষণ দেখা যায় না তাই যাদের বয়স ৫০ বা তার উর্ধ্বে তাদের উচিত বছরে একবার হলেও PSA টেস্ট করা। যদি শরীরে প্রোস্টেট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি PSA উৎপাদন করে তাহলে ধরে নেওয়া হয় তার শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। 

বর্তমান সময়ে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা হিসেবে হরমোন থেরাপির ব্যবহার করা হয়। ফলস্বরূপ একজন মানুষ পরবর্তী সময়ে সাধারণ ও সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে।

  • ডিজিটাল রেক্টাল এক্সাম (DRE):

এটি মূলত একটি শারীরিক পরীক্ষা যেখানে একজন ডাক্তার হাতে গ্লাভস পড়ে এবং রোগীর যাতে কোন ব্যাথা না লাগে সেই জন্য লুব্রিকেট ব্যবহার করে রোগীর মলদ্বারে আঙুল প্রবেশ করিয়ে প্রোস্টেটের মূল্যায়ন করেন। যদি ডাক্তার প্রোস্টেটের আকার, ধারণ এবং প্রকৃতির অস্বাভাবিকতা খুঁজে পান, তাহলে তিনি আরও স্ক্রীনিং করেন।

ওপরের প্রোস্টেট স্ক্রীনিং-এর প্রাথমিক পর্যায় গুলি ছাড়াও, আরও কিছু ডায়াগনস্টিক ব্যবস্থা রয়েছে যা নিশ্চিত রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। যথা :-

  • ছবির মাধ্যমে পরীক্ষা (Imaging Test): সাধারণত PSA পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে ইমেজিং টেস্টটি করা হয়।আল্ট্রাসাউন্ড এবং এম.আর.আই উভয় পরীক্ষাতে অস্বাভাবিক এবং অবাঞ্ছিত কোষের ভর এবং টিউমার বৃদ্ধি পরীক্ষা করার জন্য রোগীর প্রোস্টেটকে গভীরভাবে দেখতে সাহায্য করে। যদি এই বৃদ্ধি অবিশ্বাস্যভাবে বাড়ে তাহলে আরও একটি বায়োপসির প্রয়োজন হয়। নতুন নমুনা সংগ্রহে ডাক্তাররা পুনরায় বায়োপসি করান।
  • বায়োপসি : প্রোস্টেট ক্যান্সার মানুষের শরীরে নিশ্চিত কিনা সেটি নির্ণয় করার শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা হল বায়োপসি। এই প্রক্রিয়াটিতে প্রোস্টেট থেকে একটি ছোট টিসু সংগ্রহ করে সেটি ক্যান্সারযুক্ত কিনা তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্যান্সারের তীব্রতা নির্ণয় করা হয়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি চিকিৎসা যোগ্য রোগ। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একজন ডাক্তারের উচিত রোগীর শরীরে ক্যান্সার কোষগুলি কতটা তীব্রতর তা নির্ণয় করা। দুই ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি আছে যা ক্যান্সার কোষগুলি তীব্রতা নির্ণয় করতে সাহায্য করে সেগুলি হল :

1. গ্লিসান স্কোর : প্রোস্টেট বায়োপসি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষদের পূর্বাভাস মূল্যায়নে এই পরীক্ষাটি সাহায্য করে।

2. জিনোমিক টেস্টিং: জিনোমিক পরীক্ষার মাধ্যমে একজন ডাক্তার অনুমান করতে পারেন যে রোগীর শরীরে ক্যান্সার কীভাবে বাড়বে এবং কোন চিকিৎসাগুলি এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভাল কাজ করতে পারবে। 

আরও বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয় যেগুলি প্রোস্টেট ক্যান্সার নিশ্চিত নির্ণয়ের পরবর্তী পর্যায়। ক্যান্সার কি পর্যায়ে আছে সেটি নির্ধারণের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি :

1. হাড়ের স্ক্যান : প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি, যার হাড়ের মধ্যে ক্যান্সারের লক্ষণ রয়েছে তার হাড়ের স্ক্যান করতে বলা হয়। হাড়ের স্ক্যানগুলি কষ্টকর নয়, তবে সেগুলি সম্পন্ন হতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে।

2. আল্ট্রাসাউন্ড : প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রোস্টেট গ্রন্থির অবস্থা নির্ণয়ের জন্য বা ভিডিও চিত্র তৈরি করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়।

3. PET স্ক্যান : প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার পর সেই চিকিৎসাটা কতটা কার্যকারী হয়েছে সেটি দেখার জন্য PET স্ক্যানটি করা হয়। 

4. এম. আর. আই অথবা সিটি স্ক্যান: যদি কারো শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার পাওয়া যায় তাহলে সেই ক্যান্সারের পর্যায় অথবা তীব্রতা নির্ণয়ের জন্য এমআরআই করা যেতে পারে। এছাড়াও ক্যান্সারটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা সেটি জানার জন্য এই পরীক্ষাটি প্রয়োজন।

কোন ব্যক্তির শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার এর লক্ষণ দেখা দিলে তার কি কি পরীক্ষা এবং কতগুলি পরীক্ষা করা প্রয়োজন সেটি সম্পূর্ণভাবে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই করা উচিত। 

কিভাবে প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব?

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চললে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের জন্য আমাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে যাতে সেগুলি প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। রেডক্লিফ ল্যাব রোগ নির্নয়ে সহায়তা করে। দৈনন্দিন জীবনযাপনে আমরা যদি সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলি তাহলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য আহার:

আমাদের সবসময়ই স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। সর্বদা উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা জানি শাকসবজি ফলমূলতে অনেক পরিমাণে পুষ্টি এবং ভিটামিন থাকে সেজন্য বেশি করে গোটা শস্য, ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে যাতে পুষ্টি ও ভিটামিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার নিঃসন্দেহে আমাদের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

একটি সক্রিয় জীবনযাপন:

একটি সক্রিয় জীবনধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজনের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। প্রোস্টেট ক্যান্সারে সঠিক ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সঠিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন যিনি আমাদের সঠিক ওজন কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। 

নিয়মিত ব্যায়াম করা:

নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো থেকে শুরু করে অসংখ্য উপকারিতা পেতে পারি। গবেষণায় দেখা গেছে যেসমস্ত পুরুষ যারা ন্যূনতম শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করে থাকেন তাদের PSA মাত্রা বেশি। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

প্রারম্ভিক স্ক্রিনিং করা:

যদি কখনো আমাদের পরিবারে কোনো সদস্যের প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়ে থাকে, অতীতে বা বর্তমানে যদি তা বিদ্যমান হয় তবে প্রারম্ভিক স্ক্রিনিং করা অত্যন্ত জরুরি। তবে স্ক্রিনিং পেতে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত আবশ্যক। রেডক্লিফ ল্যাবে সঠিক স্ক্রিনিং পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে দ্রুত প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রতিকার সক্ষম।

প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিকল্প চিকিৎসা গুলো কি কি ?

আমরা আগেই জেনেছি এই ধরনের ক্যান্সারের কোনরকম পূর্ববর্তী লক্ষণ দেখা যায় না। তাই যাদের বয়স ৫০ কিংবা ৫০ এর উর্ধ্বে তাদের উচিত বছরে একবার করেও শারীরিক পরীক্ষা করা বা পি এস এ টেস্ট করা। ডাক্তাররা আমাদের শরীরে আদৌ প্রোস্টেট ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে কিনা, তার পরিমাণ ও ভয়াবহতা যাচাই করে চিকিৎসা শুরু করেন।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় রেডক্লিফ ল্যাবের অন্তর্ভুক্ত ডায়াগনোসিস সেন্টার গুলিতে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নতমানের। এখানে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল যন্ত্রপাতি দ্বারা মানুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য ডায়াগনোসিস সেন্টার গুলির তুলনায় রেডক্লিফ ল্যাব অনেক স্বল্প মূল্যে এই চিকিৎসা করে থাকে। ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় বলে খুব কম সময়ের মধ্যেই শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার আছে কিনা তা সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। 

যেসব চিকিৎসার মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেগুলি নিচে আলোচনা করা হলো :

  • লো-গ্রেড প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা : লো-গ্রেড প্রোস্টেট ক্যান্সার হল যখন ক্যান্সার কোষগুলি গ্রন্থিতে স্থানান্তরিত হয় এবং দীর্ঘায়িত হারে বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের ক্ষেত্রে, রোগীদের ডাক্তাররা সক্রিয় নজরদারির অধীনে থাকার পরামর্শ দেন। ক্যান্সার কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা নির্ণয় করার জন্য রোগীকে প্রতি মাসে ঘন ঘন পরীক্ষা করা উচিত।
  • অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা : যদি রোগীর শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রোস্টেট গ্রন্থির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে ডাক্তাররা র‌্যাডিক্যাল প্রোস্টেটেক্টমি নামক এক অস্ত্র প্রচার করার নির্দেশ দেন। আক্রমনাত্মক প্রোস্টেট ক্যান্সারের রোগীদের জন্য অস্ত্রোপচারের বিকল্পগুলিও আদর্শ।
  • হরমোনাল চিকিৎসা : রোগীর শরীরে যদি অত্যাধিক হারে টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়তে থাকে তাহলে তার ওপর নির্ভর করে প্রোস্টেট ক্যান্সার হতে পারে। আসলে বেশিরভাগ প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষ তাদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য টেস্টোস্টেরনের উপর নির্ভর করে। তাই হরমোনাল চিকিৎসার মাধ্যমে পুরুষদের হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি হওয়া বা প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষে পৌঁছানো বন্ধ করে। এই চিকিৎসার ফলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলি অনেক সময় মারা যায় অথবা আরোও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। প্রোস্টেট ক্যান্সারের কিছু সাধারণ হরমোন চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে গোনাডোট্রপিন-রিলিজিং হরমোন (GnRH) অ্যাগোনিস্ট এন্ড অ্যান্টিগনিস্ট, অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ইত্যাদি।
  • রেডিয়েশন থেরাপি : যদি রোগীর শরীরে প্রোস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধি আক্রমণাত্মক ভাবে বেড়ে যায় তাহলে এক্সটার্নাল বিম রেডিয়েশন অথবা ব্র্যাকিথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এটি মূলত একটি নন হরমোনাল চিকিৎসা পদ্ধতি। এছাড়াও, ক্রায়োব্লেশন, ক্রায়োথেরাপি, বা উচ্চ-তীব্রতা যুক্ত আল্ট্রাসাউন্ড (HIFU) থেরাপি প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসার একটি বিশেষ প্রচলিত রূপ। যা সাধারনত কেমো নামেই পরিচিত। এটি প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলোকে মেরে ফেলার জন্যে ব্যবহার করা হয়। যেখানে মেটাস্টেটাইজ ক্যান্সার হয়েছে সেখানে শিরায় রাসায়নিক এবং ওষুধের সংমিশ্রিত ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। প্রোস্টেট ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা না হলেও, গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে কেমোতে এর বৃদ্ধি ধীর করার ক্ষমতা রয়েছে।
  • ইমিউনোথেরাপি: ইমিউনোথেরাপি একটি সর্বশেষ ও শক্তিশালী চিকিৎসা যা ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে টিউমার শনাক্ত করা হয় এবং প্রতিরোধক কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করা হয়। 

উপসংহার

সময়মত সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। শরীরের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার এর লক্ষণ ও উপসর্গ গুলি দেখা দিলে সত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে যদি রোগীর বয়স ৪৫-এর অধিক হয় তবে প্রারম্ভিক স্ক্রিনিং করা অত্যন্ত আবশ্যক। যত তাড়াতড়ি রোগ নির্ণয় করা হবে তত তাড়াতাড়ি সঠিক চিকিৎসা কার্যকর হবে। প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রাদুর্ভাবের কারণ ও লক্ষণগুলিসহ অন্যান্য দিক গুলি সঠিকভাবে জেনে নিলে তাৎক্ষণিক রোগ নির্ণয় আরো ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।

Leave a comment

Consult Now

Share MyHealth Blog