898 898 8787

কি ফল খেলে লিভার ভালো থাকে - লিভার সুস্থ রাখার উপযুক্ত ফল

Liver

কি ফল খেলে লিভার ভালো থাকে - লিভার সুস্থ রাখার উপযুক্ত ফল

author

Medically Reviewed By
Dr. Mayanka Lodha Seth

Written By Anjali Dubey
on Jul 14, 2025

Last Edit Made By Anjali Dubey
on Jul 14, 2025

share
https://myhealth-redcliffelabs.redcliffelabs.com/media/blogcard-images/5419/c8bcdade-bd60-4b6d-8621-96fa04e09d6f.jpg
share

আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার বা যকৃত। এটি রক্ত পরিষ্কার করা, হজমে সাহায্য করা, দেহের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া, হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তি সংরক্ষণসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাই লিভারের সুস্থতা মানেই শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা।

অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন, ভাজাভুজি খাওয়া, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং মানসিক চাপের কারণে লিভার খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু জানেন কি, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু নির্দিষ্ট ফল নিয়মিত খেলে লিভার অনেকটাই সুস্থ রাখা যায়?

লিভারের কাজ কী?

লিভার আমাদের শরীরে ৫০০-র বেশি কাজ করে। এর প্রধান কাজগুলো হলো:

  • খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করে রক্তে ছড়িয়ে দেওয়া
  • রক্তে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে বের করে দেওয়া
  • শরীরে গ্লুকোজ মজুত রাখা ও প্রয়োজনে সরবরাহ করা
  • চর্বি হজমে সাহায্যকারী বাইল জুস তৈরি করা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা

যখন লিভারে সমস্যা হয়, তখন শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও প্রভাব পড়ে।

কেন ফল খাওয়া জরুরি?

ফলে থাকা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ (minerals), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার লিভারকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু ফল আছে যেগুলোর মধ্যে এমন উপাদান থাকে যা লিভারের কোষ পুনর্গঠন করে এবং প্রদাহ কমায়।

লিভারের জন্য উপকারী সেরা ফল

আঙুরে লুকিয়ে আছে লিভার সুরক্ষার মিষ্টি উপায়

চোখ জুড়ানো রঙ আর মিষ্টি স্বাদের আঙুর শুধু উপভোগ্যই নয়, লিভার সুস্থ রাখার জন্যও এক দুর্দান্ত ফল। বিশেষ করে কালো আঙুরে থাকে রেসভেরাট্রল নামে এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় এবং তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আঙুর খেলে লিভারের প্রদাহ কমে, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াও সক্রিয় থাকে।

লেবু-কমলায় মিলবে লিভারের টক-ঝাল সুরক্ষা

লেবু ও কমলা শুধু রুচির জন্য নয়, লিভারের যত্নেও একেবারে নির্ভরযোগ্য। এই ফলদ্বয়ে রয়েছে ভিটামিন C ও প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারের ডিটক্স প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

ভিটামিন C লিভারের এনজাইম অ্যাক্টিভ করে, যার ফলে ক্ষতিকর টক্সিন শরীর থেকে সহজেই বের হয়ে যায়। লেবু ও কমলা বাইল (পিত্তরস) নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা হজমে সহায়ক এবং যকৃতকে হালকা রাখে।

সকালে এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া কিংবা নাস্তা হিসেবে একটি কমলা খাওয়া—এই ছোট অভ্যাসগুলো আপনার লিভারকে দিতে পারে প্রতিদিনকার প্রাকৃতিক সুরক্ষা।

তাই লিভারকে ভালো রাখতে নিয়মিত রাখুন লেবু ও কমলা,টক স্বাদের ভিতরে লুকিয়ে আছে নিঃশব্দ রক্ষাকবচ।

বেরিতে আছে লিভারের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঢেউ

ছোট ছোট চেহারায় বেরি জাতীয় ফল, যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, ক্র্যানবেরি, তাদের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। এই সব ফলে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে।

বেরি জাতীয় ফল লিভারে চর্বি জমা রোধ করে, প্রদাহ কমায় এবং যকৃতের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। নিয়মিত এই ফলগুলি খাওয়া গেলে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।

তাই লিভারের ভালো থাকায় বেরির মতো বিশ্বস্ত ফল আর নেই, এক মুঠো বেরিতেই থাকতে পারে আপনার যকৃতের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা।

পেয়ারায় লুকিয়ে আছে যকৃতের প্রাকৃতিক রক্ষা কবচ

দেখতে সাধারণ হলেও পেয়ারার ভেতরে লুকিয়ে আছে অসাধারণ গুণ। এই সহজলভ্য ফলে রয়েছে ভিটামিন C, লাইকোপেন ও প্রাকৃতিক ফাইবার, যা লিভারকে করে তোলে আরও শক্তিশালী ও টক্সিনমুক্ত।

লাইকোপেন লিভারের কোষকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, আর ফাইবার হজম শক্তি বাড়িয়ে রাখে যকৃতের কাজকর্ম মসৃণ। এছাড়াও পেয়ারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ফ্যাটি লিভারের সম্ভাবনাও কমিয়ে দিতে পারে।

তাই লিভার সুস্থ রাখতে পাশে রাখুন পেয়ারাকে, প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর আর প্রতিদিনের ফলের তালিকায় সহজে রাখার মতো এক নির্ভরযোগ্য বন্ধু।

লিভার সুস্থ রাখতে পাশে রাখুন পেঁপেকে

ঘরোয়া ফলের তালিকায় পেঁপে আমাদের অতি পরিচিত, কিন্তু এর গুণাগুণ অনেকেই জানেন না। পেঁপেতে থাকে প্যাপাইন নামক একটি প্রাকৃতিক এনজাইম, যা হজমের উন্নতিতে দারুণ কার্যকর। শুধু তাই নয়, এই ফল লিভার বা যকৃত সুস্থ রাখতেও অত্যন্ত সহায়ক।

পাকা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে এবং লিভারের কোষগুলোকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে লিভার সুস্থ রাখার পথে এক ধাপ এগিয়ে দেবে, তাই আজ থেকেই পেঁপের শরণাপন্ন হন।

তরমুজে মিলবে লিভারের জন্য ঠান্ডা আরাম 

গরমকালের ফলের রাজা বললেও তরমুজের গুরুত্ব কমিয়ে বলা হবে। এতে থাকে শরীরকে ঠান্ডা রাখার মতো পর্যাপ্ত জলীয় উপাদান, যা গরমের দিনে শুধু হাইড্রেট রাখেই না, লিভারকে সতেজ রাখতেও দারুণ ভূমিকা রাখে।

তরমুজের ক্যালোরি কম এবং এতে থাকা লাইকোপেন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে জমে থাকা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি লিভারের কোষকে রক্ষা করে এবং ফ্যাটি লিভার বা যকৃতের চর্বি জমার প্রবণতা হ্রাস করে।

বিশেষ করে যেসব বাচ্চারা ফ্যাটি লিভারে ভুগছে, তাদের খাদ্যতালিকায় তরমুজ রাখা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

তাই গরমকালে শিশুর ডায়েটে প্রতিদিন কিছুটা তরমুজ যোগ করুন—লিভারও থাকবে সুস্থ, আর শরীর থাকবে সতেজ।

কিউইতে আছে লিভার চাঙা রাখার সবুজ জাদু

ছোট, সবুজ আর টক-মিষ্টি স্বাদের কিউই শুধুমাত্র এক্সোটিক ফল নয়, এটি লিভার সুস্থ রাখতে এক প্রাকৃতিক ও শক্তিশালী সহায়ক। কিউইতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন E, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ও ফাইবার, যা লিভার থেকে টক্সিন বের করতে এবং কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

এই ফল ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমায় এবং লিভারে প্রদাহ বা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে দারুণ কার্যকর। কিউই হজম শক্তি বাড়ায়, যা লিভারের ওপর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে।

কোন ফলগুলো লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?

অতিরিক্ত মিষ্টি ফল যেমন কলা, আনারস, লিচু অতিরিক্ত খেলে রক্তে চিনি বেড়ে লিভারে চাপ ফেলতে পারে

কাঁচা বা আধা-পাকা আম বেশি খেলে অ্যাসিডিটি বাড়ে

সংরক্ষিত ফল (Preserved fruits) যাতে কৃত্রিম রঙ বা কেমিক্যাল থাকে, সেগুলি লিভারের জন্য ক্ষতিকর

লিভার আমাদের শরীরের নীরব সৈনিক। যখন এটি সুস্থ থাকে, তখন আমরা কিছু টের পাই না, কিন্তু যখন এটি দুর্বল হয়, তখন আমাদের পুরো শরীর আক্রান্ত হতে শুরু করে।

প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে যদি আমরা কিছু স্বাস্থ্যকর ফল যোগ করি, তবে লিভারকে অনেকটাই সুস্থ রাখা সম্ভব। আপেল, আঙুর, লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, বেরি, এইসব সহজলভ্য ফল নিয়মিত খেলে লিভার তার কাজ ভালোভাবে করতে পারে এবং আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে পারে।

Leave a comment

Consult Now

Share MyHealth Blog