ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় – প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে ওজন বাড়ান

Medically Reviewed By
Dr. Mayanka Lodha Seth
Written By Komal Daryani
on Apr 15, 2025
Last Edit Made By Komal Daryani
on Jul 19, 2025

কম ওজন থাকলে অনেক রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, শরীরে দুর্বলতা আসে, আর ঠিকমতো পুষ্টি পাওয়া যায় না। কিন্তু যদি কেউ ঠিকভাবে ওজন বাড়াতে পারে, তাহলে শরীরে শক্তি বাড়ে, পেশি মজবুত হয়, আর সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
চলুন, এখন জেনে নিই ওজন বাড়ানোর কিছু সহজ ও দরকারি কথা।
কী কারণে ওজন কম থাকে?
ওজন কম থাকার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
- জিনগত বা পারিবারিক কারণে স্বাভাবিকভাবে পাতলা হওয়া
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা
- হজমজনিত সমস্যা (যেমন অ্যাসিডিটি, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য)
- থাইরয়েড সমস্যা বা হরমোনের অস্বাভাবিকতা
- দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, টিবি, ক্যান্সার
- পুষ্টিহীনতা (দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার না খাওয়া)
- খাওয়ার অনীহা বা অনিয়মিত খাওয়া
ওজন বাড়ানোর লক্ষ্য কেমন হওয়া উচিত?
আপনি যখন ওজন বাড়াতে চাইছেন, তখন লক্ষ্য হওয়া উচিত – পেশি ও স্বাস্থ্যবান শরীর তৈরি করা। এর মানে, শুধুমাত্র জাঙ্ক ফুড খেয়ে মোটা হওয়া নয়, বরং এমন খাবার খাওয়া যা আপনাকে শক্তি দেবে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং আপনাকে ফিট রাখবে।
ওজন বাড়ানোর সহজ ও কার্যকর উপায়
১. দিনে ৫-৬ বার খাওয়া
কম ওজনের ব্যক্তিরা একসাথে অনেক খেতে পারেন না, তাই দিনে ৩ বেলার পরিবর্তে ৫-৬ বার ছোট ছোট মিল খাওয়া ভালো। এর ফলে শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালোরি পৌঁছবে এবং হজমেরও সুবিধা হবে।
২. উচ্চ-ক্যালোরি ও পুষ্টিকর খাবার খান
ওজন বাড়াতে চাইলে এমন খাবার বেছে নিতে হবে যেগুলো উচ্চ ক্যালোরি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। উদাহরণস্বরূপ:
- ঘি, মাখন, বাদাম তেল
- কলা, আম, ছোলা, আলু, মিষ্টি আলু
- ডিম, মাছ, মুরগি, পনির
- দুধ, ঘোল, ছানা
- বাদাম, কাজু, কাঠবাদাম, কিশমিশ
- হোল গ্রেইন (ব্রাউন রাইস, আটার রুটি, ওটস)
৩. প্রোটিন যুক্ত খাবার খান
ওজন বাড়াতে চাইলে প্রোটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশি তৈরিতে সাহায্য করে। আপনি নিচের খাবারগুলি রাখতে পারেন
- ডিম (সিদ্ধ/ভাজা)
- মুরগির বুকের মাংস
- ডাল, মুগ ডাল, সয়াবিন
- গ্রিক দই বা ঘন দই
- ছানা ও পনির
- প্রোটিন শেক (ঘরে বানানো)
প্রতিদিন অন্তত ১.২-১.৫ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী খাওয়া দরকার।
৪. পর্যাপ্ত জল পান করুন
খাওয়া আর হজমের মধ্যে জল একটি বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু খাওয়ার ঠিক আগে বা মাঝখানে বেশি জল খেলে পেট ভরে যায়। তাই খাবারের ৩০ মিনিট পর জল খাওয়া ভালো।
৫. ব্যায়াম করুন
হ্যাঁ, ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করা দরকার। তবে কার্ডিও নয়, হালকা ওজন তোলা, যোগব্যায়াম ও বডি ওয়েট এক্সারসাইজ করুন, যেমন
- পুশ আপ
- স্কোয়াট
- প্ল্যাঙ্ক
- স্ট্রেচিং
এর ফলে পেশি বাড়ে, খিদে বাড়ে এবং খাবার ভালোমতো হজম হয়।
৬. ঘুম ঠিক রাখুন
ওজন বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। ঘুম কম হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং শরীর দুর্বল থাকে।
৭. হেলদি স্ন্যাকস খাওয়া
অনেকেই খাবারের মাঝে কিছু খেতে চায়। তখন চিপস বা চকোলেট না খেয়ে নিচের হেলদি স্ন্যাকস খেতে পারেন:
- ছোলার চাট
- কলা বা আম শেক
- বাদাম ও কিশমিশ
- পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ
- হোমমেড গ্রানোলা বার
৮. খাওয়ার রুটিন ঠিক রাখুন
নিয়মিত সময়ে খাওয়া না হলে শরীর ক্যালোরি জমাতে পারে না। তাই সকালে উঠে ৩০ মিনিটের মধ্যে ব্রেকফাস্ট, তারপর ৩ ঘণ্টা অন্তর খাবার খাওয়া অভ্যাস করুন।
৯. হজম ভালো রাখতে কিছু ঘরোয়া টিপস
- সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম জল ও লেবুর রস পান করুন
- বিটনুন ও জিরা গুঁড়ো দিয়ে দই খান
- অল্প আদা চিবিয়ে নিলে হজমশক্তি বাড়ে
১০. যে অভ্যাসগুলো ওজন বাড়াতে বাধা দেয়:
- খাবার বাদ দেওয়া বা একবেলা না খাওয়া
- অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণ (চা-কফি)
- শুধুমাত্র ফাস্ট ফুড খাওয়া
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া
উদাহরণস্বরূপ একটি দৈনিক খাবারের তালিকা
| সময় | খাবার |
| সকাল ৮টা | দুধ + কলা + ৪টা বাদাম |
| সকাল ১১টা | পরোটা + ডিম + দই |
| দুপুর ২টা | ভাত + ডাল + মাছ বা মুরগি + সবজি |
| বিকেল ৫টা | কলা শেক বা ছোলার চাট |
| রাত ৮টা | রুটি + সবজি + পনির বা ছানা |
| ঘুমানোর আগে | এক গ্লাস দুধ + কিশমিশ |
সূক্ষ্ম পুষ্টি উপাদান ও ওজন বাড়ানোর কাজে তাদের ভূমিকা
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। যদি আমরা ঠিকভাবে ভিটামিন ডি গ্রহণ করি, তাহলে শরীর ক্যালসিয়াম ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। এর ফলে হাড় মজবুত হয় এবং ওজনও বাড়ে – বিশেষ করে যারা খুব রোগা বা পাতলা, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
ভিটামিন ও মিনারেল কীভাবে সাহায্য করে?
ভিটামিন A, D, E, K
এই ভিটামিনগুলো চর্বিতে মেশে এবং শরীরে পেশি তৈরিতে ও হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন B গ্রুপ
এই গ্রুপের ভিটামিন (যেমন B1, B6, B12) শরীরে শক্তি তৈরি করতে ও হজম ভালো রাখতে সাহায্য করে। ওজন বাড়ানোর জন্য এটা খুব দরকারি।
মিনারেলস (খনিজ উপাদান)
- ক্যালসিয়াম: হাড়ের গঠন ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
- ম্যাগনেসিয়াম: পেশি কাজ করে ঠিকভাবে
- আয়রন: রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে শক্তি দেয়
- জিঙ্ক: হজমে সাহায্য করে ও খিদে বাড়ায়
ওজন বাড়াতে যে সাধারণ সমস্যাগুলো দেখা যায়
অনেকেই যখন ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করেন, তখন কিছু বাধার মুখে পড়েন। চলুন সেগুলো সহজভাবে একে একে বুঝে নিই।
উচ্চ মেটাবলিজম (High Metabolism)
অনেকের শরীরের মেটাবলিজম বা হজমের গতি অনেক বেশি থাকে। ফলে তারা যা খাচ্ছেন, তা শরীরে জমে না – বরং দ্রুত হজম হয়ে যায়। এর ফলে ওজন বাড়াতে অসুবিধা হয়।
কীভাবে সামলাবেন?
- প্রতিদিন কত ক্যালোরি খাচ্ছেন, তা হিসেব রাখুন।
- একসাথে অনেক খাওয়ার বদলে দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খান।
- প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি (ঘি, বাদাম, ডিম, দুধ) বেশি রাখুন খাবারে।
- ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে ঘরের স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
উপসংহার
ওজন বাড়ানো কোনো ম্যাজিক নয়। ধৈর্য, নিয়মিত খাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম – সবকিছু মিলেই ফল পাওয়া যায়। শুধু বেশি খেয়ে নয়, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পুষ্টিকর ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলেই ওজন স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়ানো সম্ভব।
আপনি যদি এই উপায়গুলি মেনে চলেন, তবে ১-২ মাসের মধ্যে ভালো পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

