898 898 8787

কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়?

Kidney

কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়?

author

Medically Reviewed By
Dr. Mayanka Lodha Seth

Written By Ankita Mishra
on Jul 14, 2025

Last Edit Made By Ankita Mishra
on Jul 14, 2025

share
https://myhealth-redcliffelabs.redcliffelabs.com/media/blogcard-images/None/520d110b-8394-44ea-b6f1-17af11db9e4d.webp
share

আমাদের শরীরে দুটি কিডনি থাকে, পিঠের নিচের দিকে, স্পাইন বা মেরুদণ্ডের দুই পাশে। কিডনি রক্ত পরিষ্কার করে, অতিরিক্ত জল ও বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয়, এবং শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে।

কিডনির ব্যথা কিডনি স্টোন, কিডনিতে সংক্রমণ, আঘাত বা কিডনি ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। কিডনি ব্যথার চিকিৎসা এর মূল কারণের উপর নির্ভর করে।

অনেকেই জানেন না যে কিডনি সমস্যা হলে শরীরের কোথায় কোথায় ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা অন্য অসুস্থতার সঙ্গে মিশে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে।

কিডনি ব্যথা কী?

কিডনি ব্যথা (রেনাল পেইন) হলো কিডনির আশেপাশে অনুভূত অস্বস্তি বা যন্ত্রণা। কিডনি হলো দুটি শিমের বীজের মতো অঙ্গ, যেগুলো আপনার পাঁজরের ঠিক নিচে, মেরুদণ্ডের দুপাশে অবস্থান করে। কিডনিতে ব্যথা মানেই সবসময় কিডনির সমস্যা নয়, তবে এটি সাধারণত মূত্রনালী বা ইউরিনারি সিস্টেমের কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে তার ইঙ্গিত দেয়।

কিডনির ব্যথা কেন হয়?

কিডনি আমাদের মূত্রথলি (Bladder) ও ইউরেটার (Ureter) – অর্থাৎ প্রস্রাব পরিবাহক নালীর সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই অংশগুলোর যেকোনো একটি জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে কিডনিতে ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। নিচে উল্লেখ করা হলো কিডনির ব্যথার কিছু সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ:

কিডনিতে পাথর (Kidney Stones)

কিডনিতে পাথর হওয়া কিডনি ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর একটি। শরীরের ভেতরে খনিজ ও অন্যান্য উপাদানের জমাট বাঁধার ফলে এই পাথর তৈরি হয়।

পাথর অনেক সময় বালির দানার মতো ক্ষুদ্র হতে পারে আবার মুক্তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ছোট পাথর প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে, তবে বড় পাথর ইউরেটারে আটকে গিয়ে প্রস্রাবের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।

উভয় ক্ষেত্রেই তীব্র, অসহ্য ব্যথা দেখা দিতে পারে।

প্রস্রাব আটকে রাখা বা অপূর্ণ প্রস্রাব (Urinary Retention)

এই অবস্থায় মূত্রথলি পুরোপুরি খালি হয় না। এটি হঠাৎ করেও ঘটতে পারে, আবার ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময়ে উন্নতিও পেতে পারে। এতে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে।

ভেসিকোইউরেটারাল রিফ্লাক্স (Vesicoureteral Reflux - VUR)

এই সমস্যায় মূত্র উল্টো পথে, অর্থাৎ মূত্রথলি থেকে ইউরেটার হয়ে আবার কিডনিতে ফিরে যায়।

এটি শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়সে হতে পারে।

এটি বারবার ইউরিন ইনফেকশনের কারণও হতে পারে এবং ধীরে ধীরে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ইউরেটারোপেলভিক জাংশন ব্লকেজ (Ureteropelvic Junction Obstruction)

এই সমস্যায় কিডনি ও ইউরেটারের সংযোগস্থলে অবরোধ তৈরি হয়। এর ফলে পিঠের পাশে (flank) ব্যথা হয় যা পেট বা কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ইউরেটারাল স্ট্রিকচার (Ureteral Stricture)

ইউরেটারের সংকোচন বা সরু হয়ে যাওয়া এই সমস্যার মূল লক্ষণ। ইউরেটার সরু হলে প্রস্রাব চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং কিডনিতে চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে। এটি এক পাশে বা উভয় পাশে হতে পারে।

কিডনিতে ইনফেকশন (Pyelonephritis)

এই রোগে ব্যাকটেরিয়া কিডনিতে আক্রমণ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে।

লক্ষণ হিসেবে থাকতে পারে জ্বর, কাঁপুনি, পিঠে বা পাশে ব্যথা, বমি ভাব ও বমি।

এটি একটি জরুরি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা।

পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (Polycystic Kidney Disease)

এটি একটি জন্মগত (inherited) রোগ যেখানে কিডনির ভেতরে তরলভর্তি থলি বা সিস্ট তৈরি হয়।

সিস্টগুলো বড় হতে হতে কিডনির আকার বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথা সৃষ্টি করে।

সময়ের সঙ্গে কিডনি সঠিকভাবে কাজ করাও বন্ধ করে দিতে পারে।

আঘাত বা ট্রমা (Kidney Injury or Trauma)

খেলাধুলা, দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এতে কিডনির চারপাশে রক্ত জমা হতে পারে বা প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে।

কিডনি থেকে মূত্র লিক করাও এই অবস্থায় সম্ভব।

কিডনি ক্যান্সার (Renal Cell Carcinoma)

এই ধরনের ক্যান্সার সাধারণত ষাট বা সত্তরের দশকের ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

লক্ষণ হিসেবে থাকতে পারে প্রস্রাবে রক্ত, পিঠ বা পাশে ব্যথা, অথবা পাশে শক্ত কিছু অনুভব হওয়া (lump)।

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সম্ভব।

কিডনির সমস্যা হলে ব্যথা কোথায় হয়?

পিঠের নিচে (Lower Back Pain)

  • পাঁজরের নিচে, কোমরের দুই পাশে
  • একপাশে বা দু’পাশে
  • চাপযুক্ত ও গভীর ব্যথা
  • কাশলে বা বসলে বাড়তে পারে

পাশের পাঁজরের নিচে (Flank Pain)

  • পিঠ থেকে পেটের পাশে ছড়িয়ে পড়ে
  • সাধারণত কিডনি স্টোনের কারণে

নাভির নিচে বা তলপেটে

  • কিডনি ইনফেকশন বা UTI হলে
  • নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড ব্যথার মতো

পেটের এক পাশে তীব্র ব্যথা

  • কিডনির পাথর ইউরিনারি ট্র্যাক্টে এলে
  • ঢেউয়ের মতো ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালা

কোমর থেকে উরু পর্যন্ত ব্যথা

  • ব্যথা নিচের দিকে ছড়াতে পারে
  • দীর্ঘস্থায়ী ও অস্বস্তিকর

কিডনিতে ব্যথা হলে কেমন অনুভব হয়?

অনেকে কিডনির ব্যথাকে পিঠের ব্যথা বলে ভুল করেন। তবে এই দুই ধরনের ব্যথার মাঝে কিছু স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। ব্যথার ধরন কিডনির সমস্যার ধরনের ওপর নির্ভর করে।

সমস্যাব্যথার ধরন
কিডনি পাথরতীব্র, হঠাৎ, কনকন ব্যথা
ইউরিন ইনফেকশনজ্বালাময়, চাপযুক্ত ব্যথা
কিডনি ফেইলিওরমৃদু কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা
কিডনি ফোলা বা ইনফ্লেমেশন (Nephritis)গভীর ও স্পন্দিত ব্যথা

কিডনি সমস্যা কী কারণে হয়?

কিডনি সমস্যার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে:

  • দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
  • হাই ব্লাড প্রেসার
  • কম পানি পান করার অভ্যাস
  • অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া
  • প্রস্রাবে বারবার ইনফেকশন
  • কিডনিতে জন্মগত গঠনগত সমস্যা
  • বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার ও কম ফাইবার

কিডনির ব্যথা নাকি মাংশপেশীর ব্যথা: কীভাবে বুঝবেন?

অনেক সময় কোমর বা পিঠে ব্যথা হলে তা সাধারণ মাংশপেশির টান বা স্পন্ডিলোসিস বলেও ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু কিডনি জনিত ব্যথার কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

লক্ষণকিডনি ব্যথামাংশপেশির ব্যথা
অবস্থানপাঁজরের নিচে, এক পাশেপুরো কোমর বা পিঠে
ধরনগভীর, চাপযুক্তটান ধরার মতো বা ব্যথা ছড়ানো
কবে বাড়েবসলে, চাপ পড়লেচলাফেরা বা হাঁটার সময়
সঙ্গে অন্য উপসর্গপ্রস্রাবে সমস্যা, জ্বরসাধারণত নেই

কিডনি আমাদের শরীরের "প্রাকৃতিক ছাঁকনি"। যখন এতে সমস্যা হয়, তখন শরীর নানা উপায়ে সতর্ক সংকেত পাঠায়, যার মধ্যে ব্যথা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।

পিঠ, কোমর, তলপেট বা পাশে ব্যথা হওয়া মানেই কিডনি সমস্যা—তা নয়। তবে যদি এই ব্যথার সঙ্গে প্রস্রাবের সমস্যা, ফোলা, দুর্বলতা বা জ্বর থাকে, তাহলে আর দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

সঠিক সময়ের সচেতনতা ও চিকিৎসাই কিডনিকে সুস্থ রাখার চাবিকাঠি। তাই কিডনির কথা ভাবুন—শরীর আপনাকে তার প্রতিদান দেবে।

Leave a comment

Consult Now

Share MyHealth Blog