898 898 8787

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ: জানুন গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত

Kidney

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ: জানুন গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত

author

Medically Reviewed By
Dr. Geetanjali Gupta

Written By Komal Daryani
on Sep 20, 2024

Last Edit Made By Komal Daryani
on Sep 20, 2024

share
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ: জানুন গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত
share

কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করতে সাহায্য করে, যা পরে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিডনি ড্যামেজ হলে শরীরের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয় এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। 

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন হয়, তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। এই ব্লগে, আমরা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

কিডনি ড্যামেজের কারণ

কিডনি ড্যামেজের মূল কারণগুলির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে, যেমন:

  • ডায়াবেটিস: রক্তে অতিরিক্ত শর্করা কিডনির ক্ষুদ্র ফিল্টারিং ইউনিট গুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা কিডনি ড্যামেজের অন্যতম কারণ।
  • প্রস্রাবের বাধা: প্রস্রাবের বাধা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং কিডনির ক্ষতি করতে পারে। প্রস্রাবে পাথর, প্রস্টেটের বৃদ্ধি, বা টিউমার এ ধরনের বাধার উদাহরণ।
  • অনিয়মিত ওষুধের ব্যবহার: কিছু ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। বিশেষত, ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ বা প্রদাহ নাশক ওষুধ কিডনি ড্যামেজ করতে পারে।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে স্পষ্ট হয় না। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে:

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা

কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, যা ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শক্তিহীনতার কারণ হতে পারে। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে বা অ্যানিমিয়া দেখা দিলে ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। কারণ কিডনি এরিথ্রোপোয়েটিন (EPO) নামক একটি হরমোন উৎপন্ন করে, যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। কিডনি ড্যামেজ হলে EPO উৎপাদন কমে যায়, ফলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।

  • মুখ, হাত বা পায়ের ফোলা ভাব

কিডনি ঠিকমতো ফিল্টার করতে না পারলে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হয়, যা মুখে, হাত বা পায়ে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। পায়ের গোড়ালি ও পায়ের তলা ফোলা খুবই সাধারণ লক্ষণ, যা কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে।

  • প্রস্রাবে পরিবর্তন

প্রস্রাবের রঙ, গন্ধ, পরিমাণ বা ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে, প্রস্রাবে ফেনা দেখা যেতে পারে, অথবা প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন হতে পারে। এই লক্ষণগুলো কিডনির কার্যকারিতা হ্রাসের ইঙ্গিত হতে পারে।

  • প্রস্রাবে রক্ত

কিডনি ফিল্টার সঠিকভাবে কাজ না করলে প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি দেখা দিতে পারে। এটি হেমাচুরিয়া নামে পরিচিত এবং একটি কিডনি বা মূত্রনালীতে সমস্যা বা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর কারণে হতে পারে।

  • শ্বাসকষ্ট

কিডনি ফিল্টার সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হতে পারে, যা ফুসফুসে জল জমা হতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট অনুভূত হতে পারে।

  • বমি বমি ভাব এবং খিদে কমে যাওয়া 

কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পেলে শরীরে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা বমি বমি ভাব এবং খিদে কমে যাওয়া, ইত্যাদি কারণ হতে পারে। এটি শরীরের জটিলতার কারণে ঘটে, যা অস্বস্তি এবং ওজন কমার কারণ হতে পারে।

  • ত্বকে খোসা পড়া এবং চুলকানি

কিডনি ফিল্টার প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমা হতে পারে, যা ত্বকে খোসা পড়া এবং চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। কিডনি ড্যামেজ হলে ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করে।

  • হাইপারটেনশন

কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস পেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে।

  • অনিদ্রা

কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে টক্সিন জমা হতে পারে, যা ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটায়। অনিদ্রা, বিশেষ করে রাতে প্রস্রাবের সমস্যা থাকলে, কিডনি সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, ঘুমের মধ্যে শ্বাসের সমস্যা, কিডনি ড্যামেজের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

  • মাথা ঘোরা ও মনোযোগের ঘাটতি

কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, যা মাথা ঘোরা এবং মনোযোগের ঘাটতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, কিডনি ড্যামেজ হলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয়।

কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধের উপায়

কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় রয়েছে:

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: রক্তচাপ নিয়মিত মাপা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্তচাপ মাপা, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।
  • পর্যাপ্ত জল পান করা: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে কিডনির কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ: সুষম খাদ্য গ্রহণ কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সুষম খাদ্য গ্রহণের জন্য ফল, সবজি, শস্য, এবং প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করা জরুরি।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তাই নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলা: ধূমপান এবং মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করতে পারে। তাই এই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
  • ওষুধের সঠিক ব্যবহার: কোনও ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ওষুধের নির্দেশিত মাত্রা মেনে চলা জরুরি।

কিডনি ড্যামেজের চিকিৎসা

যদি কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কিডনি ড্যামেজের চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রথমে রোগের কারণ নির্ধারণ করা হয়। এরপর রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং রোগের স্তর অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত, কিডনি ড্যামেজের চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলো ব্যবহৃত হয়:

  • ঔষধ: উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও প্রদাহজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রদাহ নাশক ঔষধ ব্যবহার করা হতে পারে।
  • ডায়ালাইসিস: কিডনির কার্যকারিতা গুরুতরভাবে কমে গেলে ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল বের করা হয়।
  • কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট: যদি কিডনি সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে যায়, তবে কিডনি প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্লান্ট) করা হতে পারে।

উপসংহার

কিডনি ড্যামেজ একটি গুরুতর সমস্যা যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে জীবন হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন, তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত জল পান, এবং রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং যেকোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a comment

Consult Now

Share MyHealth Blog