898 898 8787

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া টিপস

Health

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায় - সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া টিপস

author

Medically Reviewed By
Dr. Mayanka Lodha Seth

Written By Komal Daryani
on Jun 12, 2025

Last Edit Made By Komal Daryani
on Jul 19, 2025

share
https://myhealth-redcliffelabs.redcliffelabs.com/media/blogcard-images/None/5ba6fe00-20f5-4c3c-a8fb-38305b9f6ebe.webp
share

পেটের গ্যাস অনেকের কাছেই এক বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর সমস্যা। হঠাৎ করে পেট ফুলে যাওয়া, বুকে জ্বালা, ঢেঁকুর ওঠা বা পেটের মধ্যে গুড়গুড় শব্দ হওয়া—এসব লক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে যদি এই সমস্যা বাইরের কোথাও বা অফিসে ঘটে, তাহলে তা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
ভাগ্যক্রমে, পেটের গ্যাস খুব সাধারণ সমস্যা এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এই ব্লগে আমরা জানবো গ্যাসের মূল কারণ কী, এর লক্ষণ কীভাবে চিহ্নিত করা যায়, এবং কোন কোন ঘরোয়া উপায় দ্রুত আরাম দিতে পারে।

পেটের গ্যাস হওয়ার কারণ

পেটের গ্যাস মূলত তখনই হয় যখন হজম সঠিকভাবে না হয়। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  • দ্রুত খাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়া
    দ্রুত খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত বাতাস গিলে ফেলা হয়, যা পরে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।
  • গ্যাস তৈরির খাবার খাওয়া
    আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডাল, চিঁড়ে ইত্যাদি খাবারে গ্যাস বেশি হয়।
  • অতিরিক্ত চা-কফি বা কার্বনেটেড পানীয়
    সফট ড্রিঙ্ক বা কোলা জাতীয় পানীয় হজমে সমস্যা তৈরি করে।
  • চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার
    এ ধরনের খাবার হজম হতে সময় নেয়, ফলে পেটে চাপ পড়ে।
  • কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য
    পেটে মল জমে থাকলে তা গ্যাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • টেনশন ও স্ট্রেস
    মানসিক চাপের কারণে হজমের গতি কমে যায় এবং গ্যাসের সমস্যা বাড়ে।

পেটের গ্যাসের সাধারণ লক্ষণ

  • পেট ফোলা বা টাইট লাগা
  • ঢেঁকুর ওঠা ও বুক জ্বালা
  • পেটের ভেতরে গুড়গুড় শব্দ
  • মাঝে মাঝে ব্যথা বা চাপ লাগা
  • খিদে কমে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া

ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস কমানোর সহজ পদ্ধতি

1. গরম পানিতে লেবু ও বিট লবণ

১ গ্লাস গরম পানিতে আধা লেবু চিপে, চিমটি বিট লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে হজম ভালো হয় ও গ্যাস কমে।

2. আদা ও গোলমরিচ

১ চামচ আদার রস, ১ চিমটি গোলমরিচ গুঁড়ো ও সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা তৎক্ষণাৎ কমে।

3. পুদিনা পাতার রস

পুদিনা হজমে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার রস এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে পেট ঠান্ডা হয় এবং গ্যাস দ্রুত কমে।

4. রসুন

রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান গ্যাস এবং হজমের সমস্যায় কার্যকর। সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া বা স্যুপে দিয়ে খাওয়া উপকারী।

5. জিরা জল

১ চামচ জিরা ১ গ্লাস পানিতে সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে খেলে পেট হালকা লাগে ও হজমে সাহায্য করে।

কোন খাবার গ্যাস বাড়ায়, কোনটি কমায়?

গ্যাস বাড়াতে পারেগ্যাস কমায়
বাঁধাকপি, ফুলকপিজিরা
দুধ (ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্সে)আদা
চিঁড়ে, ডাললেবু
ভাজাভুজি, চর্বি জাতীয় খাবারপুদিনা
সোডা বা কোলাএলাচ, মৌরি

টিপস: খালি পেটে চা বা কফি না খাওয়াই ভালো।

জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন যা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে

  1. ধীরে ধীরে খাওয়া এবং ভালোভাবে চিবানো
    দ্রুত খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  2. নিয়মিত হাঁটা
    খাওয়ার পর অন্তত ১০-১৫ মিনিট হালকা হাঁটুন।
  3. জল পানের অভ্যাস
    দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন, তবে খাওয়ার ঠিক পরেই পানি না পান।
  4. ভরা পেটে না শোয়া
    খাওয়ার পরপরই বিছানায় গেলে হজমের গতি কমে।
  5. ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন
    এগুলো হজমে সমস্যা বাড়ায় ও গ্যাস তৈরি করে।

কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

  • গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (পেটের সংক্রমণ)
  • ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা (দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার হজম না হওয়া)
  • সেলিয়াক রোগ (গ্লুটেন সহ্য না হওয়া)
  • ক্রোন্স ডিজিজ (আন্ত্রিক প্রদাহজনিত রোগ)
  • ডায়াবেটিস
  • পেপটিক আলসার (পেটে ঘা)
  • আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আন্ত্রিক গোলমাল)

এই ধরণের সমস্যায় অনেক সময় গ্যাস, পেট ফাঁপা, অস্বস্তি বা বদহজমের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ব্লোটিং: সাধারণ সমস্যা, কিন্তু এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়

ব্লোটিং হলো এমন এক ধরণের অস্বস্তি, যেখানে মনে হয় পেট ভরে আছে বা পেটটা ফুলে গেছে। আর ডিস্টেনশন বোঝায় পেটের আকার চোখে পড়ার মতো বড় হয়ে যাওয়া। অনেক সময় মানুষ যখন পেটে চাপ, ভার বা অস্বস্তি অনুভব করে, তখন সেটাকে ব্লোটিং বলে মনে করে—বিশেষ করে যখন ঢেঁকুর, গ্যাস বা মলত্যাগ করেও আরাম মেলে না।

ব্লোটিং ঠিক কীভাবে গ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ব্লোটিং হয়, তাদের অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস না-ও থাকতে পারে। অনেক সময় যাদের আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) বা দুশ্চিন্তার প্রবণতা আছে, তাদের পেটের সামান্য অস্বস্তিও বড় সমস্যার মতো অনুভূত হতে পারে।

তবে, কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস ও খাবারের নিয়মে পরিবর্তন এনে ব্লোটিং অনেকটাই কমানো সম্ভব—যেমন অতিরিক্ত ঢেঁকুর এড়ানো বা এমন খাবার কম খাওয়া যেগুলো গ্যাস তৈরি করে।

ঢেঁকুর: অতিরিক্ত বাতাস বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া

ঢেঁকুর বা বার্পিং হল এমন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীর উপরের হজমনালী থেকে জমে থাকা অতিরিক্ত বাতাস বাইরে বের করে দেয়। সাধারণত আমরা যখন খাওয়ার সময় বেশি বাতাস গিলে ফেলি, তখন এই ঢেঁকুরের ঘটনা ঘটে। এই বাতাস অনেক সময় পেটে না গিয়ে খাবারনালিতেই (ইসোফ্যাগাস) জমে যায়।

আপনি যদি খুব দ্রুত খান বা পান করেন, খাওয়ার সময় কথা বলেন, চুইংগাম খান, হার্ড ক্যান্ডি চুষে খান, কার্বনেটেড পানীয় পান করেন বা ধূমপান করেন—তাহলে শরীরে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে পড়তে পারে। কেউ কেউ দুশ্চিন্তার কারণে এমন অভ্যাসে আক্রান্ত হন এবং খাওয়া বা পান না করলেও বারবার বাতাস গিলে ফেলেন।

কিছু সময়ে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা জিইআরডি (GERD) থেকেও অতিরিক্ত ঢেঁকুরের সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ এতে গিলতে থাকা বায়ুর পরিমাণ বেড়ে যায়।

এছাড়া, পেটের ভেতরের পর্দায় প্রদাহ (গ্যাস্ট্রাইটিস) বা হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণেও ঢেঁকুরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে ঢেঁকুরের সঙ্গে বুক জ্বালা বা পেটব্যথার মতো উপসর্গও থাকে।

পেটের গ্যাস সমস্যা যতই অস্বস্তিকর হোক না কেন, সচেতন হলে এবং কিছু সাধারণ অভ্যাস ও ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চললে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। প্রতিদিনের খাবার ও রুটিনে সামান্য পরিবর্তন এনে আপনি নিজেই উপকার পেতে পারেন।

Leave a comment

Consult Now

Share MyHealth Blog