ডেঙ্গু: কারণ, সতর্কতা এবং প্রতিকার

Medically Reviewed By
Dr. Ragiinii Sharma
Written By Komal Daryani
on May 23, 2023
Last Edit Made By Komal Daryani
on Jan 11, 2025

এই প্রবল গ্রীষ্মের পরে, বর্ষা আমাদের সকলের খুব ভালো লাগে। বৃষ্টি অবশ্যই উপভোগ করবেন কিন্তু আমাদের এটাও জানতে হবে যে এই বৃষ্টির সাথে আসে ডেঙ্গুর মতো সংক্রামণের ভয়। ডেঙ্গু সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত থাকে। ভারতে গ্রীষ্মের আগে এবং বর্ষাকালে এটি বেশি ঘটে। বেশিরভাগ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরএর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ অসুস্থ হয়। এরপর জুন ও জুলাই মাসে কম মানুষ অসুস্থ হয়। এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ে সাধাণত এই রোগটি হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রচুর মানুষ এই জোরে আক্রান্ত হন। মানুষ যদি এর সঠিক চিকিৎসা না পান, তাহলে মানুষ মারাও যেতে পারে। অতএব, এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে এই রোগটির স্ববিশদ আলোচনা করা হবে।
কারণ:
শুরুতেই বলা ভালো যে শুধুমাত্র এডিস প্রতাজির স্ত্রী মশা কামড়ে ডেঙ্গু হয়না, বিষয়েটি বিশদে জানা প্ৰয়োজন। বেশ কিছু চিকিৎসক দের মতে শুধু মাত্র এই প্রজাতির মশা কামড়ে কিন্তু ডেঙ্গু হয়না, তাদের মতে পরিবেশে থাকা কোনো ভাইরাস দ্বারা যদি এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশা সংক্রমিত হয় তাহলে শুধুমাত্র সেই মশার দ্বারাই ডেঙ্গু সংক্রামণের সম্ভাবনা থাকে।
এই প্রজাতির মশা রাতের অন্ধকারে থাকেনা, থাকে দিনের আলোয়, এমন ধারণা একটা সময় সবাই পোষণ করতেন কিন্তু বলা ভালো, এখন রাতেও নিস্তার নেই।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাল রোগ, যা মশা থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে, এটি প্রায় ঘটে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরদের বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন, উচ্চ তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ফুসকুড়ি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
এখনো অব্দি আমরা ডেঙ্গু কি সেই ব্যাপারে জানতে পেরেছি, কিন্তু এখনো অনেক তথ্য জানা বাকি, যা নিম্নে আলোচিত।
এই লক্ষণগুলো প্রকাশ সাধারণত সংক্রমণের পরে চার থেকে দশ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলির সময়কাল দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে যে কোনো জায়গায় পরিবর্তন হয়।
এটা দেখা গেছে যে ডেঙ্গু ভাইরাসের সাথে পরবর্তী সম্মুখীন হওয়া দুর্দশাকে আরও তীব্র করে। ফলস্বরূপ, যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সতর্কতা:
আমরা জানি যে ডেঙ্গু জ্বর টি মশা বাহিত, তাই আমাদের দেখা দরকার মশার বংশ বৃদ্ধি যাতে না হয়। সতর্কতার কোনো বিকল্প হয়না তাই নিম্মলিখিত কতগুলো সতর্কতা ব্যাখ্যা করা হলো:
- মশা তাড়াতে নিমপাতা ব্যবহার করুন, খাবার তালিকায় নিমপাতা রাখতে পারেন, ঘরে নিমপাতা জ্বালাতে পারেন মশা তাড়ানোর জন্য।
- বাড়িতে কোথাও কোনো জমা জল থাকলে সেটি ফেলে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যে কোথাও যেন কোনো জল জমে না থাকে।
- ভোরের দিকে এবং সন্ধ্যার সময় বাড়ির দরজা জালনা বন্ধ রাখুন।
- বাড়িতে ভিজে জঞ্জাল আলাদা রাখার চেষ্টা করুন, এবং ঢাকনা সহ ডাস্টবিন ব্যবহার করুন।
- শুধু মাত্র নিজের বাড়ি নয়, আপনার পার্শ্ববর্তি এলাকা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।
- ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার আবশ্যক।
- এলাকার ওয়ার্ড ও কাউন্সেলর উদ্যোগে বিভিন্ন ড্রেন এবং জঙ্গলে মশা মারার স্প্রে দেওয়ার ব্যাপারে যুক্ত হন।
- আধুনিক সময়ে, আমাদের কাছে পারমেথ্রিন মতো প্রতিরোধকগুলি রয়েছে যা মশার কামড় থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।
- তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এই রিপেল্যান্ট গুলি দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া যাবে না।
- সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন নয় থেকে ষোল বছর বয়সের কিশোরদের জন্য ডেঙ্গুর টিকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যদিও ভাইরাসের সাথে পূর্বে সংস্পর্শে ছিল তাদের জন্য সীমাবদ্ধ।
উপরিউক্ত সতর্কতা সাহায্যে আমরা কিছুটা হলেও মশার উপক্রম থেকে নিস্তার পেতে পারি।
প্রতিকার:
ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথম লক্ষণ এ হলো ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত শরীরের তাপমাত্রা উঠতে পারে, ঘামের দ্বারা জোর ছেড়ে গেলেও আবার আসতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রতিকারের কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট নেই। সহায়ক যত্নের পরামর্শ দেওয়া হয় অতএব এই রোগের কত গুলি প্রতিকার আলোচনা করা হলো:
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে ।
- তরল জাতীয় খাবার বেশি খাবেন, যেমন ডাবের জল, ফলের জুস, শরবত ইত্যাদী।
- প্যারাসিটামল বাড়িতে রাখবেন আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হন তাহলে আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারেন কিন্তু চিকিৎসকে পরামর্শ আবশ্যক।
সাবধানতা :
- প্লেটলেট বাড়াতে অযথা এটা সেটা টোটকা বেঁচে নেবেন না, ভাইরাস শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে এটি ঠিক হয়ে যায়।
- ডেঙ্গু হলে আপনারা অযথা ভয় পাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে কিছু করবেন না
- অসুস্থতার উপসংহারে, রক্তচাপ হ্রাস বা বিভিন্ন শারীরিক ছিদ্র থেকে সম্ভাব্য রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অপরিহার্য।
সুতরাং ডেঙ্গু কি, তা আমরা উপরিউক্ত আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি। একটি ক্ষতিকারক ব্যাধি, যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে জীবন হানীর সম্ভবনা থাকে। সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং কোনো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আমরা যদি সচেতন হই তাহলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে পারবো। আসুন আমরা সবাই বিচক্ষণতার সাথে কাজ করি এবং ডেঙ্গুর দুর্ভোগের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
সতর্ক থাকুন সুস্থ থাকুন !



