কলা খাওয়ার উপকারিতা: স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য
Medically Reviewed By
Dr Divya Rohra
Written By Komal Daryani
on Aug 1, 2024
Last Edit Made By Komal Daryani
on Aug 1, 2024
কলা পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ফল। সহজলভ্যতা, পুষ্টিগুণ, এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে কলা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান পেয়েছে। একলা বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান যেমন, ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।এই উপাদানগুলো আমাদের দেহের বিভিন্ন কার্যকারিতাকে সমর্থন করে এবং সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। কলা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
১. পুষ্টিগুণে ভরপুর
কলায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি, ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার, ১ গ্রাম প্রোটিন, এবং ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। এছাড়া কলায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, এবং পটাসিয়াম যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কলায় উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম কারণ। নিয়মিত কলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
৪. শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে। তাই অনেকে একে 'প্রকৃতির এনার্জি বার' বলেন। ব্যায়ামের আগে বা পরে কলা খেলে তাৎক্ষণিক এনার্জি পাওয়া যায়।
৫. মেজাজ ভালো রাখে
কলায় থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়। সেরোটোনিন হরমোন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং বিষণ্ণতা দূর করে। এছাড়াও, প্রতিটি কলায় গড়ে ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা মন ভালো রাখতে এবং ভালো ঘুম পাওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৬. ওজন কমাতে সহায়ক
কলায় ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি। ফলে এটি খেলে পেট ভরে যায় এবং ক্ষুধা কম লাগে। তাই যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য কলা একটি আদর্শ ফল।
৭. ত্বকের যত্নে
কলার মাখন ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। কলায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জৌলুস বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. কিডনি সুস্থ রাখে
কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। এটিতে পটাশিয়ামের ধারাবাহিক উপস্থিতি দেওয়ার জন্য কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমিয়ে তোলে। কলার মাধ্যমে পটাশিয়াম এর স্বাভাবিক স্তর বজায় রাখা যায়, যা কিডনির স্বাস্থ্যকে ধারণ করে সাহায্য করে।
৯. রক্তস্বল্পতা দূর করে
কলায় থাকা আয়রন রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়ায়, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। অ্যানিমিয়া হলে শরীরে ক্লান্তির অনুভূতি হতে পারে, এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূতি করতে পারেন। কলা একটি অত্যন্ত উপকারী ফল যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আয়রন রক্তে লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং ভিটামিন বি৬ রক্তে গ্লুকোজ মেটাবলিজমের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।
১০. স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। তাই পড়াশুনার সময় বা যে কোনও মানসিক কাজে কলা খাওয়া উচিত।
১১. মানসিক চাপ কমায়
কলায় থাকা পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এটি নার্ভের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
১২. চুলের যত্ন
কলার পেস্ট চুলে লাগালে চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। কলায় থাকা পটাশিয়াম এবং ভিটামিন চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
১৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
কলায় থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে, যা ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বিশেষ করে কলায় থাকা ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
১৪. হাড়ের শক্তি বাড়ায়
কলায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিয়মিত কলা খেলে হাড় মজবুত হয় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।
১৫. ভিটামিনের ঘরটি পূরণ করে
ভিটামিন ঘাটতি পূরণের জন্য কলা অত্যন্ত দারুণ সম্পন্ন। গড়ে একটি কলা আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন বি৬ চাহিদার পাঁচ শতাংশ পূরণ করতে পারে। এটি শরীরের সুস্থ কোষ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন সি দৈনন্দিন চাহিদা ১৫ শতাংশ কলা পূরণ করে।
১৬. পেশী গঠনে সহায়তা করে
কলা একটি সুবিধাজনক এবং বহনযোগ্য জলখাবার যা পেশিতে টান প্রতিরোধে সহায়ক। এটি শক্তি এবং পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট কার্বোহাইড্রেট সংমিশ্রণ প্রদান করে, যা পেশী চালিয়ে দিতে সাহায্য করে। এটি ব্যায়াম এর পরে খাওয়ার জন্য একটি সহজ বিকল্প হতে পারে ।
১৭. ডায়রিয়া জন্য উপযোগী
কলায় অবস্থিত একধরনের প্রতিরোধী স্টার্চ, যা পরিপাকের প্রক্রিয়াটিকে সুচল করে এবং বৃহদন্ত্রে গিয়ে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে পরিণত হতে পারে। যখন ডায়রিয়া হয়, শরীর থেকে অপক্ষয়িত খনিজ পদার্থ পূরণে কলার খাবার মাধ্যমে জরুরি পূরণ করা যেতে পারে।
Also Read: - https://redcliffelabs.com/myhealth/diabetes/diabetes-diabetes-symptoms-and-how-to-control-diabetes/
কলা কখন খাবেন?
কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন? কিছু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সারাদিনের উপকারিতা পেতে বিশেষজ্ঞরা সকালে কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। খালি পেটে না খেয়ে অন্য খাবারের সাথে বা সকালের জলখাবারের পরে কলা খাওয়া ভালো। কলা দিনের যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে, তবে সকালে খাওয়া হলে এটি সবচেয়ে উপকারী।
কলা রাতে খেলে কি হয়?
অনেকে বিশ্বাস করেন যে রাতে এই ফলটি না খাওয়া ভালো, বিশেষ করে যাদের হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে। যারা সর্দি বা কাশির প্রবণতা রয়েছে তারা ঘুমানোর আগে কলা না খাওয়া উচিত, কারণ এটি একটি শীতল ফল হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এটি হজম হতে বেশি সময় নিতে পারে।
উপসংহার
কলার স্বাস্থ্য উপকারিতা এত বেশি যে এটি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত। এটি শুধু পুষ্টিকর নয়, এর রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিয়মিত কলা খেলে আমরা সুস্থ থাকতে পারি এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা উন্নত করতে পারি। তাই প্রতিদিন অন্তত একটি করে কলা খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
Leave a comment
1 Comments
Keshab purkait
Sep 5, 2024 at 12:33 PM.
Nice
MyHealth Team
Sep 5, 2024 at 3:04 PM.
We are glad you found the information helpful