দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
Medically Reviewed By
Dr. Ragiinii Sharma
Written By Komal Daryani
on Nov 1, 2023
Last Edit Made By Komal Daryani
on Mar 18, 2024
ডায়াবেটিস, এমন একটি রোগ যা সম্পর্কে আমরা সকলেই ভালো ভাবে পরিচিত। সঠিক পরিচর্যা না করলে জীবন ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ নিয়ম গ্রহণ করা আবশ্যক। অতএব এই ব্লগটিতে, আমরা দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
ডায়াবেটিসএর দুটি প্রকার
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস
যদি আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় কম ইন্সুলিন তৈরী হয় বা একেবারেই তৈরী হয়না তবে এটি আমাদের রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রায় রাখতে পারে না। একে টাইপ-১ ডায়াবেটিস বলা হয় এবং এটি প্রায় বাচ্চাদের হয়।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস
এই ধরনের ডায়াবেটিসে, আমাদের অগ্ন্যাশয় ভালোভাবে কাজ করে এবং ইনসুলিন তৈরি করে, কিন্তু আমাদের শরীর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এর মানে হল যে আমাদের রক্তে শর্করা যেমন নিয়ন্ত্রণ হওয়া উচিত তেমন হয় না। পরিবর্তে, এটি বাড়তে থাকে। এর ফলে আমাদের কিডনি, হার্ট এবং চোখের সমস্যা হতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এখন বাচ্চাদেরও হয়। কখনও কখনও, এর লক্ষণ দেখা দিতে সময় লাগে, তাই আমাদের শরীরের যত্ন নেওয়া এবং সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস এর লক্ষন
- যখন কারোর ডায়াবেটিস থাকে, তখন তার শরীরে যে অতিরিক্ত ইনসুলিন থাকে কাজে আসেনা ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেনে যায়। তাই ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়।
- যখন রক্তে খুব বেশি গ্লুকোজ থাকে, তখন এটি আমাদের শরীরের চারপাশে গ্লুকোজ বহনকারী টিউব গুলিতে আঘাত করতে পারে। এর ফলে আমাদের ক্লান্ত এবং মাথা ঘোরা বোধ হয় এবং আমরা কিছুটা কাঁপতেও পারি কারণ সঠিক পুষ্টি শরীর পায়না।
- আমাদের শরীরের প্রায় ৭০% জল গঠিত। যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন তারা প্রস্রাব এবং ঘামের মাধ্যমে জল বেরিয়ে যায়। যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
- অনেক সময় গ্লুকোজে এর পরিমান বেড়ে গেলে কোনো ঘা শোকাতেও সময় লাগে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের আকৃতির পরিবর্তনের কারণে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়, এবং মনি ফুলে যায়। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে চির দৃষ্টিহীন ও হতে পারে।
- ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে এবং মস্তিষ্ককে প্রভাবিত ফেলতে পারে, তাই সম্ভাব্য রোগীদের তাৎক্ষণিক স্মৃতিশক্তি হ্রাস হয়ে থাকে।
- অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না করলে আমাদের শরীরে উৎপন্ন গ্লুকোজ অকার্যকর হয়ে পড়ে। যখন এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়, তখন আমাদের শরীরে শক্তির অভাব হয়। এর ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং অলসতা দেখা দেয়। এর জন্য আমরা ঘন ঘন খিদে অনুভব করি কারণ আমাদের শরীরে খাওয়া থেকে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়।
- ডায়াবেটিস শরীর থেকে অতিরিক্ত জলের প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়, যার ফলে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে ঘন ঘন জলের তৃষ্ণা হয়।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কতগুলি উপায়ে
- নিয়মিত ব্লাড সুগার চেকআপ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো নিয়মিত ব্লাড সুগার চেকআপ করা। আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করে প্রতি মাসে বা প্রতি তিন মাসে এই পরীক্ষা করতে পারেন। এটি আপনার ব্লাড সুগার রিপোর্ট অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
- পুষ্টিকর খাবার
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির অবশ্যই তাদের খাবারের বিষয়ে কঠোরভাবে সচেতন হয়ে হবে। প্রতিদিনের সঠিক খাবারের তালিকা তৈরী করতে হবে। অল্প করে বাড়ে বাড়ে খাবার খেলে শরীরের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়ে। হালকা এবং অত্যধিক তেলহীন উভয় ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়। অল্প করে বারবার খাওয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে, ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে।
- ব্যায়াম
নির্দিষ্ট মাত্রা ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ব্লাড সুগার স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মানসিক ব্যায়াম, যেমন ধ্যান করা, এবং বিশ্রাম গ্রহণ করা, স্ট্রেস নির্মূল করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বর্জন
দুটি ধরনের কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। প্রথম প্রকার, চাল এবং চিনির মতো সাধারণ কার্বোহাইড্রেট গুলি দ্রুত আমাদের দেহে ভেঙে যায় এবং আমাদের দ্রুত শক্তি দেয়। দ্বিতীয় প্রকার, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যেমন গম, ভেঙে যেতে বেশি সময় নেয় এবং ধীরে ধীরে আমাদের শক্তি দেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য জটিল কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওজন নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন নির্মূল করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে নির্দিষ্ট পর্যায়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
- প্রচুর পরিমাণে জল পান
প্রচুর জল পান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি প্রস্রাব করার সময় আপনার শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বেরিয়ে যায়। এছাড়াও শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, পুষ্টি ইত্যাদি বজায় রাখে। তাই প্রচুর জল পান করলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
- মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা
অনেক সময় দেখা গেছে ডায়াবেটিস এর আর একটি কারণ হলো মানসিক চিন্তা। নানান পরিস্থিতি মধ্যে অযথা চিন্তা বা মানসিক চাপ ডায়াবেটিস বাড়ায়। এটি শরীরে শর্করার পরিমান বাড়িয়ে দেয় তার ফলস্বরূপ ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। তাই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।
- নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ
ডায়াবেটিস রোগীদের কিছুটা ওষুধ নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে, এবং এই ওষুধ গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো ওষুধ খাবার আগে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা অতিঅবশ্যক, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়।
- পর্যাপ্ত ঘুম
সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আমাদের শরীরের প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া আমাদের শরীর ভালো ভাবে কাজ করে না এবং এমনকি আমাদের শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আমাদের জন্য ভাল নয়। তাই সুস্থ থাকতে এবং ডায়াবেটিস এড়াতে প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
এছাড়াও অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকার জন্য ওষুধ খেতে হয়। কোন ঔষধ খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ওষুধ গ্রহণ এবং সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে, আপনি ভাল বোধ করতে পারেন এবং ওষুধের কারণে হতে পারে এমন কোনো সমস্যা এড়াতে পারেন। অ্যালকোহল পান করা এবং সিগারেট খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তুলতে পারে এবং আপনার জীবনে অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রায়ই তাদের ডাক্তারের সাথে কথা বলা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করার এবং ওষুধ খাওয়ার নতুন উপায় তাদের ডায়াবেটিসকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
উপসংহার
এই ব্লগটিতে ডায়াবেটিস পরিচালনা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনের সামগ্রিক মান উন্নত করার কতগুলি কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ব্লগটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির যথাযথ যত্ন এবং সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব আরোপ করেছে। উপরিউক্ত পয়েন্টস গুলো যথাযত পালন করলে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা সম্ভব। এছাড়াও ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত জটিলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর এবং চাপমুক্ত জীবন বজায় রাখতে একজন সুপরিচিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Leave a comment
4 Comments
md alamin hasan
Nov 26, 2024 at 2:40 PM.
ঘন ঘন প্রসাব হয় এর লক্ষন কি ডায়বেটিস। আর আমি তো দেশের বাহিরে থাকি। ঘন ঘন প্রসাব থেকে বাঁচার উপায় কি?
Myhealth Team
Nov 26, 2024 at 7:18 PM.
ঘন ঘন প্রস্রাব ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে, তবে এটি অন্যান্য সমস্যার কারণেও হতে পারে। রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ ইউছুপ
Oct 20, 2024 at 3:45 AM.
ডায়াবেটিস রোগ মুক্তির অনেক চেষ্টা করলেও, রোগ মুক্তি হচ্ছে না -শুধু নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস চিকিৎসার/নিয়ন্ত্রণ নিয়ম পালন না করলে বেড়ে যায়। আমার ইচ্ছে ডায়াবেটিস রোগ থেক মুক্ত হতে! কিভাবে সম্ভব?
Myhealth Team
Oct 21, 2024 at 1:59 PM.
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, যদিও এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সবসময় সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেমন ফল, সবজি ও প্রোটিন খাওয়া এবং শর্করা ও চর্বি কমানো গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন এবং নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করুন। প্রয়োজন হলে মেডিসিন নিন এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
Parikshit Debbarma
May 17, 2024 at 3:52 PM.
Very helpful
Myhealth Team
May 18, 2024 at 1:12 PM.
We are glad you have liked the article.
Md. Haidar Ali
May 16, 2024 at 4:31 AM.
ভালো ঘুম হওয়ার উপায় কী?
Myhealth Team
May 22, 2024 at 7:30 PM.
ভালো ঘুম পেতে নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, সক্রিয় জীবনযাপন, এবং শান্তি সম্পন্ন রাতের রুটিন অনুসরণ করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।