কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়? জানুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

Medically Reviewed By
Dr. Mayanka Lodha Seth
Written By Komal Daryani
on Dec 1, 2025
Last Edit Made By Komal Daryani
on Dec 1, 2025

আমাদের শরীর সুস্থভাবে কাজ করতে হলে নানা ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ভিটামিন অন্যতম। ভিটামিন আসলে এক ধরনের ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। এগুলো ছাড়া শরীর ঠিকভাবে রক্ত তৈরি করতে পারে না, হাড় মজবুত হয় না, এমনকি স্নায়ুতন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে।
শরীর বেশিরভাগ ভিটামিন নিজে তৈরি করতে পারে না, তাই খাবার থেকেই এগুলো পেতে হয়। আর যখন শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হয়, তখন ধীরে ধীরে ক্লান্তি, অবসাদ, দুর্বলতা থেকে শুরু করে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
শরীর দুর্বল হওয়ার প্রধান লক্ষণ
শুধু ক্লান্ত লাগছে বলেই সবসময় শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হয়েছে বলা যায় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে, যেগুলো প্রায়শই ভিটামিনের অভাবের ইঙ্গিত দেয়। যেমনঃ
- সবসময় অবসাদ ও শক্তিহীনতা অনুভব করা
- মাথা ঘোরা বা মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা
- মাংসপেশিতে ব্যথা বা টান ধরা
- চুল পড়া ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
- বারবার অসুস্থ হয়ে পড়া বা সংক্রমণ হওয়া
এই লক্ষণগুলো অনেক সময় হালকা মনে হলেও আসলে এগুলো শরীরের ভেতরে ভিটামিন ঘাটতির সঙ্কেত।
ভিটামিন D-এর অভাব ও শরীরের দুর্বলতা
ভিটামিন D শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে এবং ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এই ভিটামিনের অভাবে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে।
লক্ষণসমূহ:
- হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা
- সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়া
- শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া (রিকেটস)
কারণ: পর্যাপ্ত রোদে না থাকা, দুধ–ডিম–মাছ কম খাওয়া, বয়স বাড়া ইত্যাদি।
ফলাফল: দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন D-এর ঘাটতি থাকলে অস্টিওপোরোসিস, হাড় ভাঙা এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ভিটামিন B12-এর অভাব ও শরীরের দুর্বলতা
ভিটামিন B12 রক্ত তৈরি এবং স্নায়ুর সঠিক কাজের জন্য অপরিহার্য। এর অভাব হলে শরীরে অক্সিজেন কম পৌঁছায়, ফলে দ্রুত দুর্বলতা দেখা দেয়।
লক্ষণসমূহ:
- সবসময় অবসাদ ও শক্তিহীনতা
- হাত–পায়ে ঝিনঝিন ভাব বা অবশ হয়ে যাওয়া
- মাথা ঘোরা ও মনোযোগের ঘাটতি
- ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
কারণ: প্রধানত নিরামিষাশী খাদ্যাভ্যাসে B12-এর ঘাটতি দেখা যায়, কারণ এটি বেশি পাওয়া যায় প্রাণিজ খাদ্যে যেমন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ।
ফলাফল: দীর্ঘদিন B12-এর অভাব থাকলে মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, স্নায়ু দুর্বলতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ে।
ভিটামিন C-এর অভাব ও শরীরের দুর্বলতা
ভিটামিন C আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক, হাড় ও রক্তনালীর সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিন শরীরে জমা থাকে না, তাই প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে পাওয়া জরুরি।
লক্ষণসমূহ:
- বারবার সর্দি–কাশি ও সংক্রমণ হওয়া
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
- দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্তপাত
- চুল পড়া ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
- শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত লাগা
কারণ: ফল ও শাকসবজি কম খাওয়া, ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি।
ফলাফল: দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন C-এর অভাব হলে স্কার্ভি নামক রোগ হতে পারে, যেখানে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দাঁতের মাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
ভিটামিন A-এর অভাব ও শরীরের প্রভাব
ভিটামিন A চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাবে শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে।
লক্ষণসমূহ:
- রাতকানা (অল্প আলোতে পরিষ্কার দেখতে না পারা)
- চোখ শুকিয়ে যাওয়া ও জ্বালা করা
- ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া
- সংক্রমণ বেশি হওয়া
- শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
কারণ: ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, গাজর, কুমড়া, শাকসবজি কম খাওয়া।
ফলাফল: দীর্ঘমেয়াদে অভাব হলে স্থায়ী দৃষ্টি সমস্যা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
ভিটামিন ঘাটতি রোধে খাদ্যাভ্যাস
ভিটামিনের অভাব প্রতিরোধ করা যায় সঠিক ও সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে। প্রতিদিনের খাবারে নিচের বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিতঃ
- শাকসবজি ও ফলমূল: বিশেষ করে রঙিন ফল (কমলা, আম, পেয়ারা, লেবু) এবং সবুজ শাক (পালং, লাল শাক, মুলা শাক) শরীরে ভিটামিন যোগায়।
- প্রাণিজ খাদ্য: মাছ, ডিম, দুধ ও মাংসে ভিটামিন B12, D ও A পাওয়া যায়।
- শস্যজাতীয় খাবার: গম, ওটস ও ডাল শরীরকে ভিটামিন B গ্রুপ সরবরাহ করে।
- সূর্যের আলো: ভিটামিন D-এর সবচেয়ে ভালো উৎস হলো সকালের রোদ। প্রতিদিন অন্তত ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকা দরকার।
কখন পরীক্ষা করানো উচিত?
শরীরে বারবার ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, চুল পড়া বা দৃষ্টি সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ভিটামিন লেভেল টেস্ট করানো উচিত। অনেক সময় শরীরে ভিটামিন ঘাটতি থাকলেও সরাসরি বোঝা যায় না। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করলে ঘাটতি ধরা পড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া যায়।
কারণ:
- অল্প বয়স থেকেই দুর্বলতা অনুভব করা
- বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় ও জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যাওয়া
- নিরামিষাশীদের মধ্যে ভিটামিন B12-এর ঘাটতি
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ভিটামিন টেস্ট অপরিহার্য
উপসংহার
শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে ভিটামিন অপরিহার্য। ভিটামিনের অভাবে শুধু সাময়িক দুর্বলতা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে—যেমন হাড় ভাঙা, রক্তস্বল্পতা, চোখের সমস্যা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। তাই প্রতিদিনের খাবারে ফল, শাকসবজি, দুধ, ডিম ও মাছের মতো পুষ্টিকর উপাদান রাখা উচিত এবং নিয়মিত রোদে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।
তবে শুধু খাদ্যাভ্যাসে নির্ভর না করে সময়মতো পরীক্ষা করানোও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীরে দুর্বলতা, অবসাদ বা অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে আজই Redcliffe Labs-এ ভিটামিন প্রোফাইল টেস্ট বুক করুন। সময়মতো পরীক্ষাই পারে আপনাকে সুস্থ ও সক্রিয় জীবন উপহার দিতে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১: কোন ভিটামিনের অভাবে শরীরে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা দেখা দেয়?
উত্তর: সাধারণত ভিটামিন D, ভিটামিন B12 ও ভিটামিন C-এর অভাবেই শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে।
২: ভিটামিন ঘাটতি হলে কি সবসময় ওষুধ খেতে হয়?
উত্তর: হালকা ঘাটতি খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা যায়, তবে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়।
৩: ভিটামিন B12-এর ঘাটতি কাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়?
উত্তর: নিরামিষাশী মানুষ, বয়স্ক ব্যক্তি ও যাদের হজমজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে B12-এর অভাব বেশি দেখা যায়।
৪: ভিটামিন D-এর ঘাটতি কমাতে কী করা উচিত?
উত্তর: প্রতিদিন সকালে অন্তত ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকা এবং দুধ, মাছ, ডিম খাওয়া উপকারী।
৫: ভিটামিন C ঘাটতির প্রধান লক্ষণ কী?
উত্তর: দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং শরীর দুর্বল লাগা।
৬: ভিটামিনের ঘাটতি কি শুধু দুর্বলতা আনে, নাকি অন্য জটিলতাও তৈরি করে?
উত্তর: হ্যাঁ, ভিটামিন ঘাটতি রক্তস্বল্পতা, হাড় দুর্বলতা, চোখের রোগ, স্মৃতিশক্তি হ্রাসসহ নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।
৭: শিশুদের জন্য কোন ভিটামিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: ভিটামিন D ও ভিটামিন A শিশুদের হাড়, দাঁত ও চোখের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
৮: কতদিন অন্তর ভিটামিন টেস্ট করা উচিত?
উত্তর: যাদের দুর্বলতা বা ঘাটতির লক্ষণ দেখা যায়, তাদের বছরে অন্তত একবার ভিটামিন প্রোফাইল টেস্ট করানো উচিত।


