কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক উপায়: কার্যকর ঘরোয়া উপায়

Medically Reviewed By
Dr. Mayanka Lodha Seth
Written By Komal Daryani
on Dec 2, 2025
Last Edit Made By Komal Daryani
on Dec 2, 2025

কোলেস্টেরল আসলে এক ধরনের ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় উপাদান, যা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে থাকে। শরীরের জন্য সামান্য কোলেস্টেরল দরকার কারণ এটি হরমোন তৈরি, ভিটামিন D উৎপাদন এবং খাবার হজমে সহায়তা করে।
সমস্যা হয় তখনই, যখন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়ালে জমে গিয়ে ব্লক তৈরি করে, যার ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর থেকেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা উচ্চ রক্তচাপের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ
প্রথম দিকে কোলেস্টেরল বাড়লেও অনেক সময় কোনো স্পষ্ট লক্ষণ বোঝা যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে শরীরে কিছু সঙ্কেত দেখা দিতে শুরু করে, যেমনঃ
- বুক ধড়ফড় করা বা অস্বস্তি
- মাথা ঘোরা ও বারবার ক্লান্ত লাগা
- শ্বাসকষ্ট
- চোখের চারপাশে বা চামড়ায় হলদে ফ্যাট জমা (xanthomas)
- হাত-পায়ে অবশভাব বা ঝিনঝিন করা
এসব উপসর্গ অবহেলা করলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেই পরীক্ষা করানো জরুরি।
You May Also Read: https://redcliffelabs.com/myhealth/bengali/which-vitamin-deficiency-weakens-the-body-know-important-information/
কোলেস্টেরল কমানোর ঘরোয়া উপায়
প্রকৃতির অনেক উপাদান আছে যা নিয়মিত খেলে বা ব্যবহার করলে কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
১. রসুন: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে।
২. মেথি: মেথি ভিজিয়ে খাওয়া বা খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করলে রক্তে চর্বি কমতে সাহায্য করে।
৩. সবুজ চা: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত পরিষ্কার করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪. ওটস: প্রতিদিন নাশতায় ওটস খাওয়া রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়।
৫. বাদাম: আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা হার্টের জন্য উপকারী।
৬. লেবু ও মধু: এক গ্লাস গরম জলে লেবুর রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আসে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্যাভ্যাস সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি -
- তেল-চর্বি কমান: ভাজাভুজি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
- শাকসবজি ও ফল বাড়ান: প্রতিদিন রঙিন শাকসবজি ও তাজা ফল খেলে শরীর প্রয়োজনীয় ফাইবার পায়, যা কোলেস্টেরল কমায়।
- চর্বিহীন প্রোটিন বেছে নিন: মাছ, ডাল ও মুরগির মাংস ভালো বিকল্প।
- ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন: বেকারি আইটেম, কুকিজ, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস কম খাবেন।
- লবণ ও চিনি সীমিত করুন: অতিরিক্ত লবণ ও চিনি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়।
জীবনযাপনে পরিবর্তন
কোলেস্টেরল শুধু খাবারের কারণে নয়, জীবনযাপনের ভুল অভ্যাসেও বেড়ে যায়। তাই কিছু সহজ পরিবর্তন খুবই জরুরি -
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: স্থূলতা কোলেস্টেরল বাড়ার অন্যতম কারণ।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল ছাড়ুন: এগুলো সরাসরি হার্টের ক্ষতি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়।
- স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপও কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যোগব্যায়াম, ধ্যান বা পর্যাপ্ত ঘুম এতে উপকারী।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: শুধু উপসর্গের জন্য অপেক্ষা না করে বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করুন।
কখন পরীক্ষা করানো উচিত?
কোলেস্টেরল বেড়ে গেলেও অনেক সময় শুরুতে কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। তাই নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি -
- পরিবারের কারও হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার সমস্যা থাকলে
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলে
- ধূমপান বা অ্যালকোহলের অভ্যাস থাকলে
- ৩০ বছরের পর থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার অংশ হিসেবে
সময়মতো পরীক্ষা করলে সমস্যা ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু করা সহজ হয়।
উপসংহার
উচ্চ কোলেস্টেরল অজান্তেই শরীরে জমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়াই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান-অ্যালকোহল এড়ানো এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে কোলেস্টেরল অনেকটাই কমানো যায়। একই সঙ্গে ঘরোয়া উপায় যেমন রসুন, মেথি, সবুজ চা, ওটস বা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে ভেতর থেকে সুরক্ষা দেয়।
তবে শুধু অভ্যাস পরিবর্তন নয়, নিয়মিত পরীক্ষা করাও অত্যন্ত জরুরি। আপনার যদি বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি বা পারিবারিক ঝুঁকি থাকে, তাহলে দেরি না করে আজই Redcliffe Labs-এ লিপিড প্রোফাইল টেস্ট বুক করুন। সময়মতো পরীক্ষা মানেই সুস্থ হৃদয় আর দীর্ঘ, নিরাপদ জীবন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত (FAQs)
১: কোলেস্টেরল কী?
উত্তর: কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বিজাতীয় পদার্থ, যা শরীরের প্রতিটি কোষে থাকে এবং হরমোন, ভিটামিন D ও হজমে সাহায্য করে। তবে রক্তে মাত্রা বেড়ে গেলে বিপদজনক।
২: কোলেস্টেরলের কত ধরনের থাকে?
উত্তর: মূলত দুই ধরনের- LDL (খারাপ কোলেস্টেরল), যা রক্তনালীর দেয়ালে জমে যায়, আর HDL (ভালো কোলেস্টেরল), যা খারাপ কোলেস্টেরল সরাতে সাহায্য করে।
৩: উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রধান কারণ কী?
উত্তর: অতিরিক্ত তেল-চর্বি খাওয়া, স্থূলতা, ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান-অ্যালকোহল, বংশগত কারণ ও ডায়াবেটিস।
৪: উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ কী কী?
উত্তর: বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, চোখ বা চামড়ায় হলদে ফ্যাট জমা এবং বারবার ক্লান্ত লাগা।
৫: কোলেস্টেরল কমাতে কোন খাবার বেশি খাওয়া উচিত?
উত্তর: শাকসবজি, ফল, ওটস, বাদাম, মটরশুঁটি, মাছ ও অলিভ অয়েল।
৬: কোলেস্টেরল কমাতে ঘরোয়া উপায় কী কী?
উত্তর: রসুন, মেথি ভিজিয়ে খাওয়া, সবুজ চা, গরম জলে লেবু-মধু, নিয়মিত বাদাম ও ওটস খাওয়া।
৭: ব্যায়াম কি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা সাইক্লিং করলে HDL বাড়ে এবং LDL কমে।
৮: ধূমপান ও অ্যালকোহল কোলেস্টেরলে কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর: এগুলো সরাসরি খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে।
৯: কতদিন অন্তর কোলেস্টেরল টেস্ট করা উচিত?
উত্তর: সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ২-৩ বছরে একবার, আর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি বা রোগীদের বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করা উচিত।
১০: উচ্চ কোলেস্টেরল কি শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণে কমে যায়?
উত্তর: অনেক সময় শুধু খাবার ও জীবনযাপনের পরিবর্তনেই কোলেস্টেরল কমে যায়। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োজন হয়।


